মোহাম্মদ কামারুজ্জামান : জীবন, রাজনীতি ও বিচারপ্রক্রিয়া

প্রারম্ভিক জীবন

মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালের ৪ জুলাই শেরপুর জেলার বাসিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কিশোর বয়সেই ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, যা ছিল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন।

রাজনৈতিক কার্যক্রম

স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে সক্রিয় হন এবং ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে উঠে আসেন।

  • তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দলটির বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন।

  • পরবর্তীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হন।

  • রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতায়ও জড়িত ছিলেন এবং দলীয় বিভিন্ন প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।





১৯৭১ সালের ভূমিকা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনী ও স্থানীয় মিলিশিয়াদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অভিযোগ করা হয়, তিনি শেরপুরে বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও মুক্তিকামীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) গঠন করে।

  • ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে।

  • তার বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ আনা হয়, যার মধ্যে গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

  • ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।

  • আপিল বিভাগও পরে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি ছিলেন যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন জামায়াত নেতার একজন।

মূল্যায়ন ও বিতর্ক

  • সমর্থকগোষ্ঠীর মতে, কামারুজ্জামান ছিলেন একজন আদর্শবান ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ, যিনি অন্যায়ভাবে দণ্ডিত হয়েছেন।

  • সমালোচক ও ভুক্তভোগীদের মতে, ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংস অপরাধের জন্য তার বিচার ও দণ্ড প্রয়োজনীয় ছিল।

  • ফলে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে একদিকে রাজনৈতিক নেতা, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি—উভয় পরিচয়ে চিহ্নিত হয়ে আছেন।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url